প্রকাশ :
২৪খবর বিডি: 'রাজধানীর বুকে সাত সাতটি ফ্ল্যাট, উত্তরায় প্লট, গ্রামের বাড়িতে জমি, একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি, শেয়ারবাজারে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ, ব্যাংকে মেয়াদি আমানতসহ কোটি কোটি টাকার অঢেল সম্পদ। এত এত সম্পদের ফিরিস্তি যাঁকে ঘিরে, তিনি মো. আবুল কাশেম। ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) অতিরিক্ত সচিব। শুধু সম্পদের পাহাড় চূড়ায় ওঠেননি তিনি, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে অবৈধভাবে চাকরির মেয়াদও বাড়িয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।'
-দুদক সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি আবুল কাশেম ও তাঁর স্ত্রী ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. হাসিনা এমরোজ মল্লিকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং কাশেমের বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরির অভিযোগ আসে। পরে অভিযোগটি যাচাই করতে অনুসন্ধান শুরু হয়। অনুসন্ধানে তাঁদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। যা তাঁদের বৈধ আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
-এ ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হলে বা অর্থসম্পদের কোনো তথ্য গোপন করা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে দুদক আইনি ব্যবস্থা নেবে। তাঁদের সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করা সম্পদ অর্জনের যথাযথ উৎস উল্লেখ করতে হবে। তাঁদের দখলে থাকা সম্পদ বৈধ আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ইতোমধ্যে আবুল কাশেম ও তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
'দুদকে পেশ করা অভিযোগে বলা হয়, আবুল কাশেম অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে চাকরিকালে মুক্তিযোদ্ধা না হওয়ার পরও জালিয়াতি করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বানিয়ে অতিরিক্ত সময় চাকরি করেছেন। আইআরডিতে চাকরির আগে তিনি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের দায়িত্বে থাকাকালে বেসরকারি খাতের বিভিন্ন কোম্পানিকে সুবিধা দিয়ে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়েছেন। চাকরিকালে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।'
-দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া সম্পদ : রাজধানীর মিরপুরের রাকিন সিটিতে আবুল কাশেম ও তাঁর স্ত্রীর নামে দুটি ফ্ল্যাট, ঢাকার মোহাম্মদপুরের আদাবরে একটি ছয়তলা বাড়িতে স্বামী-স্ত্রীর নামে দুটি করে চারটি ফ্ল্যাট ও রাজধানীর উত্তর কমলাপুরে ৬৪-৬৮ নম্বর ইস্টার্ন হাউজিংয়ে আবুল কাশেমের নামে আরেকটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বর্তমানে তাঁরা ওই ফ্ল্যাটে বাস করেন। রাজধানীর উত্তরায় রয়েছে একটি প্লট। চাকরিকালে নিজ এলাকা চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছেন।
-কে এই আবুল কাশেম :আবুল কাশেম রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারের আওতায় ১৯৮৫ সালের ২৭ মার্চ সহকারী বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী পদে চাকরিতে যোগ দেন। প্রায় ২১ বছর প্রকৌশল ক্যাডারে চাকরি করার পর তাঁর আগ্রহ ও তদবিরে কাশেমকে প্রশাসন ক্যাডারে আত্মীকরণ করা হয়। এই ক্যাডারে তিনি প্রায় ১৪ বছর চাকরি করেন। সর্বশেষ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল অবসরে যান।'
'স্ত্রী ডা. হাসিনা এমরোজ ১৯৯১ সাল থেকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সিনিয়র মেডিকেল অফিসার (বহিঃ গাইনি বিভাগ) হিসেবে কর্মরত। যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক রোড এলাকার আল বারাকা ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সে ও আল বারাকা হাসপাতাল কমপ্লেক্সে তাঁর শেয়ার রয়েছে।'
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিবের মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ
-দুদকের অনুসন্ধান প্রসঙ্গে আবুল কাশেম বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে দুদকে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেটা সঠিক নয়। কেউ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এমন অভিযোগ করেছে। আমার স্ত্রীর নামে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেটাও যথার্থ নয়। আমি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি করিনি- এই তথ্যও মিথ্যা।' তিনি দাবি করেন, দুদক অনুসন্ধানে তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পায়নি। শিগগির দুদক তাঁদের অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেবে।
তবে দুদক সূত্র বলছে, 'আবুল কাশেম ও তাঁর স্ত্রীর ডা. হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যায়ে তাঁদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।'